সেলিম সানোয়ার পলাশ, রাজশাহী ব্যুরোঃ রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ভার্চুয়াল কোর্টের কার্যক্রম চলছে সনাতন পদ্ধতিতে। সামাজিক বা শারীরিক কোন দুরত্বই মানা হচ্ছে না। উপেক্ষা করা হচ্ছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কতৃক নির্দেশিত মামলার কার্যক্রম পরিচালনায় ভার্চুয়াল আদালতের নীতিমালা। প্রতিটি মামলার জামিন আবেদন এবং বেলবন্ড অনলাইনে জমা দেয়ার কথা থাকলেও উৎকোচের বিনিময়ে পেশকার, পিওন হাতে হাতে তা জমা নিচ্ছেন। আর জামিন শুনানী ভার্চুয়াল বা ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে করার কথা থাকলেও শুনানীর সময় আইনজীবীদের স্বশরীরে জেলা জজের এজলাস কক্ষে উপস্থিত হতে হচ্ছে। এতে করে আইনজীবী ও মক্কেলেরা শুধু স্বাস্থ্য ঝুকিতেই পড়ছেনা পাশাপাশি ভার্চুয়াল কোর্টের নীতিমালা ও উদ্দেশ্য চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।
সোমবার দুপুর ১২টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ মীর শফিকুল আলম নিজের খাস কামরায় অবস্থান করেন। আর খাসকামরা সংলগ্ন মূল এজলাস কক্ষে গাদাগাদিভাবে শতাধিক আইনজীবীসহ রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী-(পিপি) এড. ইব্রাহীম হোসেনকে দেখা যায়। সেখানে রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবীকে এজলাস কক্ষের ভেতোরেই আইনজীবীগন তাদের মামলার শুনানীর ডাক পড়ার অপেক্ষায় ভীড় করে ঘিরে রাখেন এবং রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী তার মুঠোফোন সাধারণ আইনজীবীদের হাতে দিয়ে মামলার শুনানীতে অংশগ্রহন করতে বলেন।
এভাবে একই মুঠো ফোনে কোন প্রকার সামাজিক দুরত্ব বজায় না রেখে এক অভিনব পন্থায় আইনজীবীগনকে মামলার শুনানী করতে দেখা যায়। সেই সাথে কিছু আইনজীবীগনকে এ বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হতে দেখা যায়। এবং অনেকেই মন্তব্য করেন করোনা ঝুকি নিয়ে আমাদের ওকালতি করতে হচ্ছে। কিন্ত মহামান্য রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ ও সুপ্রিমকোর্টের নীতিমালা অনুযায়ী ভার্চুয়াল কোর্ট এমন হবার কথা ছিলোনা। এদের মধ্যে অনেকেই মন্তব্য করেন, যদিও রাজশাহী এখন পর্যন্ত সফলভাবে করোনা সংকট মোকাবেলা করে আসছিলো কিন্তু জেলা জজ আদালতে মামলা পরিচালনার এই অভিনব পদ্ধতি ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনাকে অনেকটা প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে। কোর্টের পরিবেশ এতোটাই ঝুকিপূর্ণ ছিলো যে, অনেকে আতঙ্কিত হলেও তাদের করার কিছু ছিলোনা। তারা আরো মন্তব্য করেন, জেলা জজ তার নিজের খাস কামড়ায় থাকায় হয়তো বাইরের পরিবেশ সম্পর্কে অবগত ছিলেননা।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কর্মরত পেশকার আবু হেনা মোস্তফা কামাল এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা এতো মানুষের উপস্থিতি দেখে আতঙ্কিত হয়েছি। রাজশাহী বার সমিতির সভাপতি ও রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী-(পিপি) এড. ইব্রাহীম হোসেনকে বার বার বলেও এজলাস কক্ষ থেকে তাদেরকে বের করে দেয়া সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যায়ে আমরা আদালতের বেঞ্চ দিয়ে ডক এরিনা ঘিরে কার্যক্রম পরিচালনা করেছি।
রাজশাহী এডভোকেট বার সমিতির সাধারন সম্পাদক এড. পারভেজ তৌফিক জাহেদী বলেন, আজকের এই পরিবেশ তৈরি হবার কথা ভেবেই আমরা ভার্চুয়াল আদালতে অংশগ্রহন করা থেকে বিরত ছিলাম। কিন্ত জেলখানায় আটক আসামীদের কথা মানবিক বিবেচনায় নিয়ে আজ ভার্চুয়াল কোর্ট অংশগ্রহন করি। আজকের এ পরিস্থিতির ব্যাপারে আমরা লিখিত আকারে সুপ্রিমকোর্ট ও আইন মন্ত্রনালয়কে অবহিত করবো।
এ বিষয়ে রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী এড. ইব্রাহীম হোসেন বলেন, আমরা ভার্চুয়াল কোর্টের সাথে অভ্যস্ত না। আজ প্রথম দিন হওয়ায় এলোমেলো পরিবেশ তৈরী হয়েছে। আগামী কাল থেকে এটি সমাধানের চেষ্টা করবো। তিনি নিজের ফোনে সাধারণ আইনজীবীদের শুনানী করানোর বিষয়টি অস্বীকার করেন।